রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৮ অপরাহ্ন
কালের খবর রিপোর্ট :
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন। ছাত্রদল থেকে উঠে আসা এই নেতা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে নকলের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গিয়ে দেশব্যাপী পরিচিতি পান। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মিলন মনোনয়ন না পাওয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন তার কর্মী-সমর্থকরা। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছিল।
যদিও মনোনয়ন দেয়ার সময় এই নেতা ছিলেন কারাগারে। গত ২৮ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান মিলন। এরপর থেকে রাজনৈতিক কর্মকা-ের পুরোপুরি চুপচাপ তিনি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও এই মুহূর্তে মূল কাজ হলো তার যেসব মামলায় জামিনে আছেন তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। যে কারণে আদালতের ধার্য দিনে মামলায় হাজিরা দেয়া নিয়েই তার ব্যস্ত সময় যাচ্ছে বলে জানা গেছে। চিকিৎসার জন্য বর্তমানে এহসানুল হক মিলন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে।
বিগত ২০১১ সালে কয়েকটি মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন এহসানুল হক মিলন। পরে প্রায় দুই বছর জেল খেটে জামিনের মুক্ত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের কয়েক দিন আগে মিলন বিদেশে চলে যান। দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর দেশের বাইরে থাকার পর দেশে ফিরে চট্টগ্রামে তার এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপন করেন মিলন। কিন্তু এরপরই ২৩ নভেম্বর চাঁদপুর জেলা পুলিশের একটি দল চট্টগ্রামে গিয়ে মিলনকে গ্রেপ্তার করে।
এরই মধ্যে নির্বাচনী দামামা বেজে ওঠে। তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। মিলনের স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবীও মনোয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পান মালয়েশিয়া প্রবাসী মোশারফ হোসেন। অভিযোগ ওঠে অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন পেয়েছেন মোশারফ। এর প্রতিবাদে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন মিলনের কর্মী-সমর্থকরা। পরে অবশ্য নিবৃত হয়ে যান তারা।
চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী মিলনের বিরুদ্ধে এলাকায় হত্যা ও চেষ্টা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, চাঁদাবাজি এবং ছিনতাইসহ মোট ২৫টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে পুলিশ গত বছরের ২৩ নভেম্বর গ্রেপ্তারের পর মিলনকে ২০০৬ সালে একটি হত্যা, ২০১০ একটি হত্যা চেষ্টা এবং ২০১১ সালে একটি চাঁদাবাজি মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখিয়েছিল। পরে আদালতে এসব মামলার নথি উপস্থাপিত না হওয়ায় বিচারক মোহাম্মদ শফিউল আজম মিলনকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর পর থেকে ২ মাস ৭ দিন চাঁদপুর জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন।
জানা গেছে, মুক্তির পর আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়া ছাড়া আর চাঁদপুর যান না মিলন। স্থানীয় সাংসদ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের প্রভাবের কারণে এলাকায় যেতে পারছেন না তিনি। মামলার হাজিরার দিন নেতাকর্মী বেষ্টিত হয়ে চাঁদপুরের আদালতে গিয়ে পরে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরাও কচুয়াতে দলীয় নেতাকর্মীরা কোনো কর্মসূচিও পালন করছেন না সেইভাবে। তারাও ঢাকায় এসে নেতার সঙ্গে দেখা করে চলে যান।
মিলনের ঘনিষ্ঠ একজন ছাত্রদল নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, এখন তার মূল ব্যস্ততা আসলে মামলার হাজিরা দিয়ে জামিনটা সচল রাখা। আর তেমন কোথাও কোনো কিছু করছেন না। রাজনীতি ও দলের কার্যাক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন। টকশোতে যাওয়ার জন্য অনেক টিভি চ্যানেল থেকে অনুরোধ করা হলেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয় নিয়ে তেমন ক্ষোভ না দেখালেও দল আগামী দিনে কী করণীয় ঠিক করত চায় তিনি সেদিকে নজর রাখছেন বলে জানান ছাত্রদলের এই নেতা।
ব্যাংকক থেকে চিকিৎসা শেষে দ্রুত স্ত্রীকে নিয়ে মিলন দেশে ফিরবেন এমনটা একটি সূত্রে জানা গেলেও সেখান থেকে তার লন্ডন যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।